Like us on Facebook

Powered By bloggadda

Sunday, August 22, 2010

পলাশ মাহমুদের মিনি বকবক
এটা কোন গল্প না, কোন কিছুই না। লিখতে ইচ্ছে করলো তাই লিখতাম। প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো তাই জাতির সামনে তুলে ধরলাম।
------------------------------------------------------
আজকে মেজাজ বহুত খারাপ, চড়াইয়া, থাপড়াইয়া সবাইকে সিদা কইরা ফালামু! জোতা পরিস্কার করতে করতে বিরবির করলো ইলিয়াস।
কিছুক্ষন আগে বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় কাদায় ভরপুর। জোতা পালিস করতে হলে আগে জোতা পরিস্কার করতে হচ্ছে। কেউ কেউ কাদার সাথে গরুর গোবরও লাগিয়ে নিয়ে এসেছে।
ইলিয়াস! ছোট খাট ব্যবসায়ী। একটা বাক্স, গোটা কয়েকটা জোতার কালির কোটো, বোট, সুই, সুতা নিয়ে তার ব্যবসা। বাস্তায় যখন তখন বসে হেরে গলায় চিৎকার করে- এই বুট পালিস! পালিস!
কোট টাই পড়া বিশিষ্ট ভদ্রলোক দেখলে হাসিমুখে বলেন- জোতা পালিস করাবেন স্যার! আয়নার মতো চক চকে করে দিমু। সাব, পালিস করাইবেন?
কাদা পরিস্কার করতে হচ্ছে, তাতে করে যে ইলিয়াসের মেজাজ খারাপ তা নয়। তার মেজাজ খারাপ, তার বউ তাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। বউ এর সাথে আজকে ঝগড়া হয়েছে। ঝগড়া হওয়াটা নতুন কিছু নয়, প্রায় সময়ই হয়ে থাকে। আর ঝগড়া হলেই বউ ঘর থেকে বের করে দিয়ে ভিতর থেকে ছিটকিরি দিয়ে বসে থাকে। দুনিয়াতে বিয়ে করাও উচিত না, ঘর জামাইও থাকা উচিত না।
তার বিয়ে হয়েছিলো হঠ্যাৎ করেই। তখন তার আপন জন বলতে কেউ নেই। রাস্তায় রাস্তায় ঘুর ঘুর করতো। ওস্তাদ হিসাবে একদিন রাস্তার মাঝে পেলেন ছমির ব্যাপারীকে। মাটির মানুষ। বিরাট বিদ্যান। হাতের পলকে জোতা আয়নার মতো চকচকে করে ফেলতেন। তার কাছ থেকেই বুট পালিসের হাতে খড়ি। গুরুজী আরেকটা কাজ খুবই ভালো পারতেন। তা হলো হাত সাফাই। যখন তখন চোখের পলকে যার তার পকেট সাফ করে ফেলতেন। ইলিয়াসের জোতা সাফ করা শিখা হলো কিন্তু বড় বিদ্যা হাত সাফাইটা শিখা হলো না। আফসোস। বড়োই আফসোস। বড় বিদ্যাটাই হাতছাড়া করতে হলো। কে যেন বলেছিলো- চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি ধরা না পরে।
ইলিয়াস ধরা পড়ে গেল। কমলাপুর রেলস্টেশন। তাকে বেধে রাখা হলো একটা খুটির সাথে। তারপর নাকে খদ দেওয়া হলো। ইয়া বড় মোটা মোটা লাঠি দিয়ে যাচ্ছে তাই ভাবে পিটানো হলো। তিনি শরীর টানটান করে বসে থাকলেন। এখানে হয়েছে আরেকটা ভুল। ওস্তাদজী বলেছিলো- পাবলিকের মাইর খাবার সময় শরীর টান টান করে রাখা যাবে না। তুলার মতো নরম করে রাখতে হবে কিন্তু পাবলিকের মাইরের সময় কি এতো সব নিয়ম কানুন মাথায় থাকে। আজও অমাবর্ষা পূর্নিমার রাইতে ব্যাথা জাগ দিয়ে উঠে। এখানেই যদি সমাপ্ত হতো তাহলে তো হতোই, পাবলিক ইলিয়াসের মাথার চুল কেটে দিলো। চুলও কাটলো বহুত কায়দা করে, মাথার চুল খাবলা খাবলা অবস্থা। কোথাও আছে কোথাও নাই। তারপর আবার চুন কালি মেখে দেওয়া হলো। ইলিয়াস মনে মনে কসম কাটলো- এবার যদি বাইচ্চা ফিরি, জীবনেও আর কখনো চুরি করবো না।
সেই দিন সে বেচেই ফিরেছিলো। কাপুনি দিয়ে জ্বর আসলো। ওস্তাদজি তার বাড়ি নিয়ে গেলেন। তার মেয়ে জরিনা তার সেবা যত্ন করতে থাকলো। বড়ই চমৎকার মেয়ে। কয়েকদিনেই তাকে সুস্থ করে তুললো তারপর বিয়ের মালা পড়িয়ে গলায় ঝুলে পড়লো। এখন কিছুতে কিছু হলেই বলে- চোরের আবার বড় গলা। আফসোস। বড়োই আফসোস। বিয়ের আগের জরিনা আর পরের জরিনার মাঝে অনেক তফাৎ।
-----------------------------------------------

0 comments